স্বদেশ ডেস্ক:
বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এর প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা ও সামগ্রিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নে প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর তালিকাও করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে সুনির্দিষ্টভাবে একীভূতকরণ (মার্জার) আইন না থাকায় ব্যাংক কোম্পানি আইনও সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।
অর্থ বিভগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মার্জ করার বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। দুর্বল ব্যাংকের তালিকা প্রণয়ন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন- দুটি কাজই একসঙ্গে চলবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কমিশন গঠন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করা, শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা, গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারগুলোকে অর্থনীতির পাওয়ার হাউস হিসেবে গড়ে তোলা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, ব্যাংকঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নসহ আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে ব্যাংকের নির্বাহীরা নিজ নিজ ব্যাংকের হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরেন। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি। এ ছাড়া নতুন ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায় পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ করা হয়। এতে সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংকগুলো শুধু মুনাফামুখী আচরণ করছে বলে মত দেন অর্থমন্ত্রী। খেলাপি ঋণ বাড়লেও একই সঙ্গে মুনাফা বাড়ছে- এ বিষয়টিকে কিছুটা অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি। এ জন্য শুধু মুনাফামুখী না হয়ে খেলাপি ঋণ আদায় ও নতুন ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পারফরম্যান্স বিচারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বছর বছর লোকসান গুনলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বাড়ছে। অন্যদিকে বেসরকারি অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। ফলে আমানতকারীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ইতোমধ্যে পিপলস লিজিং নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের (বিলুপ্ত) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এর পর আর কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এমন নাজুক অবস্থায় যেতে দিতে চায় না সরকার। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে একটির সঙ্গে আরেকটিকে একীভূত করা হবে।
সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব আসতে পারে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি পৃথক প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো আইনি কাঠামো না থাকায় দুর্বল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় একীভূত হতে পারছে না। তাদের দুর্বলতার কারণে গ্রাহকরা আমানতের অর্থ সময়মতো ফেরত না পাওয়ায় পুরো আর্থিক খাতের দুর্নাম হচ্ছে।
এ দুর্নাম এড়াতে বা আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হতে পারে, সে জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া প্রণয়ন করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আইনের সংশোধন এমনভাবে করা হবে, যাতে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা দুর্বলতার একটি স্তরে নেমে গেলে তারা নিজেরাই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মার্জ হয়ে উদ্ধারের পথ খুঁজতে পারে।
ঋণের সুদহার কমিয়ে আনতে ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকই প্রতিযোগিতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে না। কীভাবে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে হবে।